আজ সেই কলঙ্কিত ০৫ জানুয়ারি। ২০১৪ সালের ০৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে টানা দ্বিতীয় বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচন ছিল অনেকটাই তামাশার নির্বাচন। ০৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করে বিচারের উপর নগ্ন হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। প্রতিবাদে সকল বিরোধীদল নির্বাচন বর্জন করে। এমনকি ২০০৮ সালের নির্বাচনের সঙ্গী জাতীয় পার্টিও নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়। চাপে পড়ে আওয়ামী লীগ। কিন্তু কৌশলী শেখ হাসিনা জাতীয় পার্টির বেগম রওশন এরশাদকে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি করায়। ভাঙন সৃষ্টি হয় জাতীয় পার্টিতে। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি না হওয়ায় তাকে জোর পূর্বক অসুস্থতা দেখিয়ে সিএমএইচ হাসপাতালে ভর্তি করায় আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টির কিছু প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন এবং মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। সেখানেও বাঁধে বিপত্তি। জোর করে কিছু প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহার বন্ধ করে দেয়। এমনকি ১৫৪ আসনে কোন বিরোধী প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগ সরকার গঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। যা নিতান্তই জাতির সাথে তামাশা ছাড়া কিছুই নয়।
বাকি আসনগুলোতে নামকাওয়াস্তে নির্বাচন হলেও তা ছিল ভোটারবিহীন নির্বাচন। রেকর্ড সংখ্যক কেন্দ্রে কোন মানুষ ভোট দিতে যায়নি। অসংখ্য কেন্দ্রে ভোট প্রদান হার ছিল ৫% এর নিচে। ফলে নির্বাচন নিয়ে দেশে বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। তখন জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবাদে শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন এটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। সংবিধান সমুন্নত রাখতে নির্বাচনের আয়োজন না করে উপায় ছিল না। খুব শীঘ্রই পুনঃ নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
কিন্তু কে শোনে কার কথা? এক রোখা শেখ হাসিনা নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। এমনকি পোষা গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টি একদিকে সরকারে অংশ নিয়ে কয়েকজন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আবার সংসদে বিরোধীদলের ভূমিকাও পালন করেন। যদিও সেটা ছিল শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। বিরোধী দল হিসেবে কোন দায়িত্ব পালনের সুযোগ ছিল না জাতীয় পার্টির। শেখ হাসিনার কোন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার উপায় ছিল না তাদের। সরকারের এই ধরনের ব্যবস্থা ছিল গনতন্ত্র ধ্বংসের অন্যতম মাধ্যম।
দেখতে দেখতে চলে যায় ০৫ বছর। আওয়ামী লীগ সরকার টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকারের মেয়াদ পূর্ণ করে। জাতির সাথে তামাশা, গাদ্দারি ও মিথ্যা আশ্বাস ০৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে কলঙ্কিত করেছে। এমন কলঙ্কিত দিন জাতি ভুলবে না।